সিসু, লাহুল উপত্যকা হিমাচলপ্রদেশ | Sissu , Lahul Valley , Himachal Pradesh Tour
হেমন্তের রঙে রঙিন সিসু (Autumn Colours )
"এই দাঁড়াও! দাঁড়াও! দাঁড়াও!"---- বলে সব্বাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলাম। এমন বিহ্বল অবস্থা আগে কখনও হয়েছে কিনা মনে নেই। প্রায় লাফিয়ে নামলাম গাড়ি থেকে। এ কি বিস্ময়! আমাদের দেশেও হেমন্তের এমন রঙ! পরক্ষণেই মনে হলো-- হবে নাই বা কেন? কি নেই আমাদের দেশে! আর সব ভালো শুধু বিদেশেরই বা কেনো হবে আর সবসময় এমন তুলনাই বা করি কেন? আমাদের দেশ তো অতুলনীয়! ঝরা পাতার এ-কি অপূর্ব শোভা। রাস্তার দুদিকে লাইন দিয়ে উইলো-পপলার গাছের সারি হেমন্তের ছোঁয়া পেয়ে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে দুলে দুলে অদ্ভুত রিণরিণ সনসন একটা শব্দ হয়েই চলেছে। তার সাথে টুপটাপ ঝরা পাতা সঙ্গত দিচ্ছে। নীল আকাশের সামিয়ানার নীচে সামনেই ভাস্বর গেফাং শৃঙ্গ। চোখ ঝলসে যাচ্ছিলো সিসুর রূপে। রুক্ষ লাহুল উপত্যকার বুকে সিসু যেন একটা ওয়েসিস। আমরা মুগ্ধ, দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য ! ছবি তুলে তুলে আশ আর মিটছে না! ড্রাইভার সাহেব সেলফি তুলতে তুলতেই আমাদের তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন-- আজ অনেকটা পথ যেতে হবে, ফেরার সময় আবার হবে। কিন্তু মন মানে না, তবুও যেতে হলো। মনে মনে ঠিক করলাম ফেরার সময় এখানে একদিন থাকতেই হবে। দেখলাম রাস্তার ওপরেই বেশ কটা ভালো হোটেলও আছে। এগিয়ে চললাম কেলং-এর দিকে। সেখান থেকে ত্রিলোকনাথ হয়ে উদয়পুর ঘুরে আবার ফেরার পালা। সেই গল্প পরে বলবো। এখন সিসুর রূপে মজেছি আমরা।
![]() |
সোনালী সিসু |
সোনালী সিসু (Golden_Sissu) | Sissu Village
হিমাচলপ্রদেশের লাহুল উপত্যকায় সিসু এক সোনার খনি। বিশেষ করে সময়টা যদি হয় হেমন্তকাল। মানালি-লে হাইরোডের ওপর মানালি থেকে সিসুর দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিমি (85 km from Manali) (আমরা রোটাং-পাস হয়ে গিয়েছিলাম, অটল টানেল দিয়ে গেলে মানালি থেকে সিসুর দূরত্ব অনেকটাই কমে যায় প্রায় ৪০ কিমি)। মানালি ছাড়িয়ে চির-পাইনের সারি, আপেল-ন্যাসপাতি বাগান আর বিপাসা নদীর হাত ধরে নেহরুকুন্ড, কোঠি, রহলা, মারহি পেরিয়ে ক্রমশঃ চড়াই আর হেয়ারপিন বাঁক অতিক্রম করে ৫১ কিমি দূরে রোটাং পাস শীর্ষ (৩৯৭৮ মি.)। এবার ১১ কিমি উৎরাই পথে গ্রামফু পেরিয়ে বাঁ-দিকে চন্দ্রা নদীকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলা। আরো ৫ কিমি এগিয়ে খোকসার (৩১৪০ মি.)। খোকসার লাহুলে ঢোকার প্রবেশদ্বার। খোকসার থেকে সিসু-- এক অপরূপ গ্রাম। আকাশের গাঢ় নীল আর ঝরাপাতার সোনালী আভা, বাতাসে তার মর্মরধবনি, দূরে রজতশুভ্র তুষারশৃঙ্গ-- সব মিলেমিশে একাকার।
অন্যরূপে সিসু
সিং-জির তাড়া খেয়ে বিহ্বল অবস্থা কিছুটা কাটিয়ে এগিয়ে চলেছি। তবু মন যেন সিসুতেই পড়ে থাকল। ফেরার সময় আবার সিসুকে ( ৩১২০ মি.) দেখলাম অন্যভাবে। আসার সময় যেমন রোদ ঝলমলে সিসুকে দেখেছিলাম এবার সিসুর মুখ ভার। মেঘলা আর তেমনি কনকনে হাওয়া। এমন আবহাওয়া মানেই ওপরে তুষারপাতের ইঙ্গিত। আরো একবার শিক্ষা হলো অন্ততঃ পাহাড়ে পরের জন্য কিছু ফেলে রাখতে নেই। সামনেই এক ছোট্ট লেক, একটু দূরে এক ঝরণা আর চারপাশে তুষারশৃঙ্গের শোভা---- এইসব কিছু নিয়েই সিসু। তবে সিসু লেকে এইসময় জল নেই, শুকনো ডোবার মত লাগলো। মন ভরল না। মরসুমে (জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর) যখন জল থাকে তখন লেকে বোটিং-এরও ব্যবস্থা থাকে। সেইসময় আবার সিসুর এমন সোনালী রূপ দেখা যায় না। দূরে একটা তিরতিরে নদী মিশেছে চন্দ্রা নদীর সঙ্গে, তারও নাম সিসু। পাহাড়ের একটা বিরাট অংশ প্রায় ঝুলছে, তারই গা বেয়ে এক ঝরণা নেমে এসেছে সিসু নদীর বুকে। লেকের পাড় ধরে ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম লেকের বুকে ঝরণার প্রতিচ্ছবি।
মানালি থেকে কেলং বা লে যাওয়া আসার পথে একটা রাত সিসুতে থাকার পরিকল্পনা রাখলে ভালো হয়, বিশেষ করে সময়টা যদি হয় অক্টোবর মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ। মানালি থেকে অটল টানেল পেরিয়ে একদিনেই সিসু ঘুরে আবার মানালি ফিরে আসা যায়। তবে একদিন সিসুতে থাকলে বেশি ভালো লাগবে।
হিমাচলপ্রদেশের বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট সিসু ভ্রমণের কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ তথ্য
কিভাবে যাবেন | How to visit Sissu , Lahul Valley , Himachal Pradesh
হাওড়া থেকে ট্রেনে কালকা বা চন্ডীগড় হয়ে বাস/গাড়িতে মানালি। অথবা বিমানে/ট্রেনে দিল্লী পৌঁছে, দিল্লী থেকে ডিলাক্স বাস/গাড়িতে মানালি। চন্ডীগড় থেকে মানালির দূরত্ব
৩১০ কিমি। মানালি থেকে লোকাল বাস/জীপে অথবা ভাড়া গাড়িতে সিসু যাওয়া যায়।
অটল টানেল হয়ে এখন এইপথে যাতায়াত অনেক সহজ ও সংক্ষিপ্ত হয়েছে। মানালি থেকে একদিনেই সিসু ঘুরে আসা যায়। প্রায় সারা বছরই সিসু অবধি যাওয়া যাচ্ছে। শীতকালে বরফাবৃত সিসুর সৌন্দর্য্যও অতুলনীয়।
কোথায় থাকবেন | Hotels in Sissu Village Himachal Pradesh tour
সিসুতে আমরা থেকেছিলাম পাম ধারা তে।
(Ph no: 09418118873/ 09459915888)
এছাড়াও আরো কিছু ভালো হোটেল আছে পর পর।
আরও পড়ুনঃ
কেদারনাথ থেকে ত্রিযুগীনারায়ণের পথে